তিনশো টাকায় পাঁচশ কবিতা পাওয়া যায়

তিনশো টাকায় পাঁচশ কবিতা পাওয়া যায়

তিনশো টাকায় পাঁচশ কবিতা পাওয়া যায়। 
ভাবা যায়! এই বাজারে!
কার আর নজরে পড়বে!
আমার মতই কিছু হতচ্ছাড়া 
কোমরে লাঠির বাড়ি মারা 
কোনও জীবন্মৃত বেড়ালের
বা মেয়ের ভগ্নাংশের না পারা 
অন্তাধুনিক সরলের ভুল উত্তর তরল হয়ে ফুটবে
অথবা জুটে যাবে যত ছোটখাট 
ভালবাসি  তাই গাই - গিটারের দল,
ট্রেনে চেপে, বাঁধা রাখা সাইকেলে চেপে 
রোজ বাড়ি ফেরে তারা
সাদাকালো মোবাইলের পাশে আজও যারা
 দশ টাকার টপ-আপ আছে!
রিংটোনে শুধু পিংপিং বাজে গীত গাতা চল।
হবে সেই রকম কিছু সাপ ব্যাং 
আর মানুষের চিৎকার
হয়ত দরকার আছে
কবিতা এই নিয়েই বাঁচে
ঠিক খুঁজে দুঃখ বিলাসী কবিকুল
অন্তরিক্ষ ঝলমল।
কারখানা বন্ধ হলেই ভোরবেলা শপিং মল।


আদার ব্যাপারী  দু তিনটে জাহাজের বোঝা নিয়ে 
ঘরে ফেরে
দেখে ঝোলা ঝেড়ে 
কোন কনফিডেন্স নেই
একচুয়ালি কবিতা লেখে সেইই
ইদানিং মেরুদণ্ডহীন 
ডিভিডির ফাইলটুকু পেন-ড্রাইভে মেপে
স্রেফ গাঢ় নীল আপেক্ষিক শারীরিক যন্ত্রণা
প্রশমনের জীন আজও আসে রীতিমত।
চুপচাপ,
[এ শহরে কুদেখা আজও নেকুপুশু – পাপ! 
এখনও মোঘলাই অনুগত]
বলে, ভীষণ জেদের বসে, 
বাৎস্যায়নী ব্যাঙের ছাতা করে নেব জয়
রাতে বাড়ি ফিরতেই না ফিরতেই আঠালো ভয়
যাই হোক কিছু একটা ডিকেডেন্স চায়।
মাথার ভিতর  নগ্ন বনিতা  ঘোরে
 ঘড়ির কাঁটায় সুখ শ্রান্তি কমে বাড়ে
মর্ষিত প্যানাসিয়া রোজকার মত ট্রাম-বাস, ট্রেন থেকে, 
কালেভদ্রে ট্যাক্সি থেকে, রিকশা থেকে নামে
ওরা খালবিল পার হয় 
দেব-কোয়েলের নতুন গান হয়ে আসে
কিছুক্ষণ আপনমনে ভাসে 
বাথরুমে, 
দৌড়ে যায় সাইবার ক্যাফে
ইউটিউবের নির্জাসে। 
যদি কিছু পায়!



ওপারে পুরানো বাড়িটা বিক্রি হবে 
সস্তায় দামি মাল পাওয়া যদি যায়
ভাবা যায় এই বাজারে!
ওদের নজরে পড়বেই, 
জানে, ধোপে টিকতে পারবে না
পারবে না কিছুই কিনে নিতে,
পয়সা নেই, জোর নেই, টিকে থাকার ইচ্ছেও নেই
ওরা শুধু আছে কিছু জ্যান্ত লাশ 
নিস্তরঙ্গ শৌখিন প্লাস্টিকের আর রবারের চটি
শিশি-বোতল, সকাল এখানে বিকেল ওখানে 
চায়ের দোকানে বসে
সিওপিডিরা কাশে,
 শুধু তাকিয়ে থাকতে ভালবাসে,
হঠাৎ, দুপুরে বাসি কাগজ পড়তে এসে 
ফসসাপানা মেয়েটির স্পর্শ পেয়ে যায়।
কেউ কেউ নাকি জাদুটোনা জানে
বউদিরা হাত ধরে টানে
বিকেল গোল হয়ে বসে সবাই মিলে হাসে।


কিছু জ্যাম, ডিম-পাউরুটি, চাউমিন 
ড্যালহাউসির  মধ্যবিত্ত দিন
দুশো বছর পার, 
সোঁদা গন্ধের নামই মূত্রাশয় জানবার পর 
যারপরনাই চিৎকার তুমি কার!
এইতো আমি সান্যালদা! 
তোমার অলিখিত পাংশুটে ঋণ।
তারপরই বাৎসরিক দুর্গা পূজার ঝঙ্কার
থেকে থেকে কাশফুল হুটপাটি  করতেই থাকে 
কোনও ভুলভাল কলকাতার পাশে
হাওয়া লিখে দেয় শরতের ক্লিশে রূপকের 
নগণ্য আশীর্বাদি রাস্তার ফুলমালার বকুনি।
শুকিয়ে যায় তখুনি।
একছত্র অধিপতি মনটা পড়ে থাকে হারু পাগলার রকে।
নানাবিধ ক্যাশমেমো ক্রেডিট কার্ডের মুখরিত জ্বলা
আনন্দে উড়ে যাবে, ‘বাবা আরেকটা বেলুন কিনে দেবে 
ভেসে যাব বেশ আরও কিছুদিন’।
আরে বলো না, কি কি কিনতে হবে আর নিউ মার্কেটই যেতে হবে
তারপর কিন্তু প্লিজ হালকা একটু নেব, কপাট দিয়ে দ্বারে 
রোজকার মধুচন্দ্রিমায় যাব!
তোমার গল্পের গরু তালগাছ পাবে সঙ্গোপনে নতুন ক্যরেক্টার রোল’।


এইভাবে ভোর হয়, সন্ধে হয়, রাত্রি ক্ষয়ে আবার লোহার পেটাই খাটে শোবে
এইভাবেই তাদের ছেলেমেয়ে, যেদিন প্রথম সূর্য গিলতে ছুটেছিল হনুমানের দল
মানে, ওই অতিকৃত কাল জানে না কাটবে কিনা
পার হবে তবু
লাঙলের ফলায় অনেকদিনই প্রেরনা জুবু থুবূ।

বাইরে, ঘরে নান্দনিক আতঙ্ককে শুনে পদধ্বনি গোনে
সেন্সেক্স পড়ে যাচ্ছে  নাকি ঠিক তালে তালে
ওই আসে বা এসে গেছে প্রায় 
অসভ্যতার মাপা চাপা ধ্বনি শোনাতে চায়
মর্ত্যের স্বর্গ থেকে পাতালের জঠর থেকে 
আকাশের ছায়াপথ থেকে
ক্রন্দসী আলোর জাটিঙ্গা নিজেই আসছে ধেয়ে
আবশ্যিক ভৈরবী ডমরুর শব্দ নিয়ে
ভাবতেও ভাল লাগে আমরা একসাথেই মরব তবে।
বোকা, ওরা চাঁদে চলে যাবে!


তারপর তোমাকেই আবার গড়ি
এসেছেন আরেক কবি
কালের শতচ্ছিন্ন মলিন কাঁথায় নকশা কাটে 
রাস্তার ধারে বসে থাকা কুকুর, প্লাস্টিকে ভরা পুকুর
জীবনযাত্রায় কোথাও কোথাও একই রকম দারিদ্র চলাফেরা
কিছু কিছু রাস্তার কোনে অবিক্রিত, বিকৃত সম্ভার
অগুন্তি তিরস্কার, কানমলা, কিল চড়, লাথি 
মর তোরা মর!
পুড়ে যাওয়া মুখ ভাঙ্গা আয়নার কাঁচে 
আর কোথাও ঘুঁটে ভরা উনুনের আঁচে
অন্যমনস্ক এই শহরের আনাচে কানাচে 
ভর্তি থাকে কাক চড়ুই চিল।
কলতলার ভিড়
জল নিতে দৈনিক ঝগড়ার সাথে মেলবন্ধন
পুরানো জিনিস বেচবার আর নতুন
প্লাস্টিক গামলায় দুদিনেই চিড়
প্রতিদিন কাছে দূরে
তবু বিক্রি হতে থাকে হরেক মাল কুড়ি টাকা আজও আজকাল।
ভোর হয়, এখনও কোথাও নাকি
সন্ধেবেলা হারমোনিয়াম আজও গান গায়
রাত্রি মিলে যায় বিছানায় পেতে রাখা মাদুরে
মানব মানবীর শান্তির জল।


তিনশো টাকায় পাঁচশ কবিতা পাওয়া যায় 
ভাবা যায় এই বাজারে
কার আর নজরে পড়বে!
কাঁচের মত দানব টাকার মায়া নিজেদের ইচ্ছাভৃত ছায়া
যত চায় সব পেয়ে যায় 
অমরাবতীর ফ্যান্টাসি জাপ্টে ধরে
ওদের এই নতুন শহর বারে বহরে বাহারে।
তারা আজও  কোজাগরীর প্রসাদ পাবে,
কেউ অবসন্ন অপসৃত নয়,
তারা কবিতা লেখে না, তারা গান শোনে না
তারা কেনে, তারা বেচে, অব্যর্থ সাইলকের সন্ততির মতিগতি
ঠিক ফুলের দেশে, অবশেষে কনক্রিটই লেটেক্স, সেক্সিকীট
যারা দামি, যারা অস্বাভাবিক, যারা ধ্বংস করে, যারা তৈরি করে,
যারা ঘরে ফেরে ব্যুগাতি চড়ে, যারা সস্তায়  স্তুপাকার
বাবার প্রিয়তমা কারখানার মর্ত্যভুমি কেনে, 
কারনে, অকারনে
তাদের জন্য রাখা থাকে অন্যরকম ছায়াপথ
তাদের ডিসাইনার চশমার ফ্রেমে
ফুটবে নতুন আরেক শহরের নতুন ফুল।
ঐযে শিশির মার্কেটঐযে সংশয়বিদ
ঐযে জিন্সের নিচে সাবাল্টার্ন চাপ
সালাড দাও সালাড, মুড়ি আর লঙ্কার চপ
হে এলোমেলো মুখের উপরে চুল
তিনশো টাকায় পাঁচশ কবিতা পাওয়া বড়সড় ভুল!

Comments

Popular Posts