ভয়
ছোটবেলায় ভয় করলে গুহ্যদ্বারের তিন ইঞ্চি উপরে টান মারত
আর ভীষণ ব্যাথা করত তখন, বন্ধুরা বলত- ‘দ্যাখ শুকিয়ে গ্যাছে’,
বুঝতাম না ওরাও না বুঝেই বলত – বড়দের থেকে শেখা।
ওরা দাঁত বের করে হাসত।
আমিও হাসতাম যখন রাম, শ্যাম, যদু এবং ইন্দ্রজিতের শুকিয়ে যেত।
আমি, ভয়, আর শুকিয়ে যাওয়ার সমানুপাতিক সম্পর্কের টানে
সেই শিরশিরানি ক্যামন পা বেয়ে নেমে নেমে যেত।
একসময় ভুলে যেতাম, জীবনও চলত গতানুগতিক।
সে ফিরে আসত – সাইকেলে চেপে, প্রশ্নপত্রে মেপে,
কখনো অসহিষ্ণু রাস্তার মাঝে
আমি আর কুকুরের একসাথে পার হতে কৈশোর কাল,
শুকিয়েই যেত অবান্তার।
ইতিহাসের রূপ ধরে,
ভূগোল চুপ করে কোনও কোনও রেসাল্টের আগের রাতে।
হাফ্প্যান্টে ঢাকা চতূর্মুখী গ্রন্থিতে বসে পড়ত
আর কি টান – ঊফ্! মাগো!
খালি জেনেছিলাম ওর আরেক নাম কায়াহীন।
এই ভয় নিয়েই বড় হতাম, ছোট হতাম।
আগুপিছু না ভেবে এগোতাম আর পিছতাম।
সারাদিন সারারাত গুহ্যদ্বারের ইঞ্চি তিন উপরে মারত টান,
বালিশে মুখ গুঁজে পড়ে থাকতাম।
রাম, শ্যাম, যদু এবং ইন্দ্রজিতের কাছে কোনোদিন শুনিনি ওরাও ভয়
পেত বা বালিশের কাছে সব বলত কিনা।
আমি বলতাম- জড়িয়ে ধরে, থুতু লাগিয়ে ভিজতাম সারা গা – তারপরই আমার ক্ষয়।
সমস্ত শরীর তিন ইঞ্চি হয়ে আমার মিনার ছোট হতে হতে
ভীষণ রূপ ধারণ করে -
যত্নের শরীর বেয়ে বীভৎস শীত উঠে পড়ে।
এ কার শরীর! পোকার মত ছোট –
কুড়িটা আঙ্গুল থেকে কুড়িটা গাছ ক্ষেপণাস্ত্র হয়ে ছুটে যাচ্ছে,
ধেয়ে যাচ্ছে, যাচ্ছে উড়ে!
পোকাটার কালো দেহের নিচে লুকিয়ে আমিই বসে আছি শাদা হয়ে।
সেই গাছগুলো থেকে আরও ডালপালা,
পাতা বেড়িয়ে তালে তালে নৃত্যরত,
ফল ধরেছে কালো, কাঠবেড়ালি কালো, কাঠ কালো, বেড়াল কালো,
আকাশটাও ক্যামন প্রতিযোগিতার জালে
কালো হয়ে গ্যাছে –
ক্ষেপণাস্ত্র ছুটতেই একটা ফল ফেটে পড়ল মাটিতে –
আর আমার পাশের কুকুরটা, আমার সঙ্গী, আমার
ধর্ম, আমার বর্ম, দৌড়ে ভূলোক থেকে সমস্ত গতি নিয়ে,
আলোর থেকে বেশী দূরে পড়ে থাকা ফলটা খেতে যাচ্ছে।
আবার ভয় পেলাম, চিৎকার করব যেই,
দেখি আগুন লেগে গ্যাছে ততক্ষণে চারিধারে, চোখে, মুখে –
কালো ধোঁয়া উঠছে গল্গলিয়ে।
কে সেই দ্বিখন্ডিত ফলের মাঝে জাঁকিয়ে বসেছে!
একি মধুসুদন দাদা! কালো অদ্বৈত আনাদি
শালগ্রাম শিলা বসেছে জমিয়ে।
অখন্ড প্রজ্ঞায় মেতে উঠেছেন,
স্বমন্তক মণির দুস্টুমি ভরা অনির্বচনীয়
আধিভৌতিক অন্তাধুনিক অব্যয়ের হাসি হেসে।
তারা মণ্ডল মুছে মুছে, নতুন নতুন গল্প লিখে
সমস্ত দ্যুলোকের তারই জ্বালানো
আর নিভে যাওয়া আলোয় ভেসে ভেসে।
আর আমি বলতে চাইছি চিৎকার করে-
আমায় মুক্ত কর,
আমায় বদ্ধ কর,
আমায় জমিয়ে দাও,
আমায় পুড়িয়ে দাও
আমায় প্লাবন কর,
আমায় সৃষ্টি কর,
আমায় ধ্বংস কর,
আমায় ভয় দাও আরও,
আরও, আরও, মারো আরও,
আমার চোখ উপরে নাও,
আমার অহংকার খুবলে দাও,
আমায় ডুবিয়ে দাও,
আরও শুকিয়ে দাও,
আমায় শান্ত কর,
আমায় নির্বিষ কর।
আমার বিষদাঁত দাও,
আমার জ্বরা দাও,
আমায় যৌবন দাও,
আমার বাস্তব কারো,
আমায় স্বপ্নে ভর।
ঠিক তখনই আমার পাশের কুকুরটা,
আমার সঙ্গী, আমার ধর্ম, আমার বর্ম,
দৌড়ে, ভূলোক থেকে সমস্ত গতি নিয়ে,
আলোর থেকে বেশী দূরে পড়ে থাকা
ফলটা খেতে খেতে চলে গেল,
আমায় ভয়ঙ্কর একখানা শীত দিয়ে!
Comments
Post a Comment